ছোটবেলার বন্ধুত্ব , যৌবনে নির্বাক প্রেমের শুভ পরিণয়, পুরোহিত মশাইয়ের মন্ত্রোচ্চারণে
ক্যালকাটা টাইম মলয় দে : নদীয়ার শান্তিপুর বেলঘড়িয়া এক নম্বর পঞ্চায়েতের পেশায় তন্তুজীবি সুব্রত প্রামাণিকের জৈষ্ঠ পুত্র সৌরভ।
পাত্রী রানাঘাট হিজুলির মুদি দোকানদার অসীম দাসের কনিষ্ঠ কন্যা সুস্মিতা।
গতকালই তাদের ছোটবেলার বন্ধুত্ব পরিণতি লাভ করলো দাম্পত্য জীবনে।
কিন্তু সে আর নতুন কি! এরকম তো হামেশায় হয়।
কিন্তু না , এক্ষেত্রে সৌরভ সম্পূর্ণ মূক এবং বধির। সুস্মিতা শোভন যন্ত্রের সাহায্যে, কিছুটা শুনতে এবং কোনরকমে দু’একটি কথা বলতে পারে। হবিবপুরের একটি মূক-বধির বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত তারা। সেই সূত্রেই দুই পরিবারের মধ্যে আলাপ, সৌরভের ঠাকুরমা স্বপ্না প্রামাণিকের সুপ্ত বাসনা ছিলো নাতবৌ করে নিয়ে আসবে সুস্মিতাকে। তবে লোকলজ্জার কারণে সে কথা বলা হয়নি কখনো। এরপর সৌরভ কলকাতায় স্পেশাল এডুকেশন নিয়ে মাধ্যমিক পাস করে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই কল্যাণী আইটিআইতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। সে বিদ্যার মূল্য না পেয়ে বর্তমানে অবশ্য একটি শপিং মলে কর্মরত। অন্যদিকে সুস্মিতা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে, পরিবারের খরচের টাকা জোগাতে, মায়ের প্রচেষ্টায় বিউটি পার্লারের কাজ শিখে দোকান দেয় বাড়িতেই। সুস্মিতা এবং সৌরভের সেই ছোটবেলার বন্ধুত্বের পর দীর্ঘ এক যুগ পরে সৌরভের বাড়ি বেড়াতে এসে সুস্মিতার মা সম্বন্ধর পাকা কথা সেরে ফেলেন! ইতিমধ্যে ছোটবেলার বন্ধুত্ব যৌবনে হোয়াটসঅ্যাপ, ভিডিও কলে প্রেমে রূপান্তরিত হয়। পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু, দীর্ঘ লকডাউন সব সমস্যা কাটিয়ে অবশেষে চার হাত এক জায়গায় করলেন ঠাকুমা।
এ প্রসঙ্গে সৌরভের মা অবশ্য জানান, সৌরভ কে ছোটবেলা থেকে মানুষ করতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শিখে নিয়েছি ওর ভাষা! তখনই অনুভব করতাম কথা বলতে পারা কোন মেয়ে নয়, না বলতে পারা মেরি বিশেষ প্রয়োজন সৌরভের জীবনে। সুস্মিতার কথা বলার সমস্যা নিয়েই, আনন্দ উচ্ছ্বাসে খুব কষ্ট করেই জানালো সে খুব খুশি সৌরভ কে পেয়ে। বাবার মতন শ্বশুরমশাইও এ বাড়িতে একটা পার্লার খুলে দেবে। সৌরভ এবং তার পরিবারের রোজগেরে গিন্নি হতে চায় সে! সাথে সরকারি ভাতা তো আছেই! সৌরভের আকার-ইঙ্গিত বুঝে সুস্মিতা জানাই সৌরভের ইচ্ছা চার মা-বাবাকে এক সূত্রে বাঁধবে ভবিষ্যতে। কথা বলতে না পারা সুস্মিতা তিন বান্ধবী, এবং এক দম্পতি হাজির ছিলো কন্যাযাত্রীদের সাথে। সৌরভেরও আকারে-ইঙ্গিতে ভাব বিনিময় করা বেশকিছু দূরের বন্ধুরে না আসতে পারলেও জেলার মধ্যের এক দম্পতি ও তিন বন্ধু উপস্থিত ছিলো গায়ে হলুদ থেকে ফুলশয্যা পর্যন্ত।