সুতপা দে সরকার : কেদারনাথ এত বিখ্যাত কেন? বিগত কয়েক বছর ধরে এত ভিড় কেন কেদার যাত্রায়?

 

ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের কেদারনাথ শহরের হিমালয় পর্বতমালায় ৩,৫৮৪ মিটার (১১,৭৫৯ ফিট) উচ্চতায় মন্দাকিনী নদীর তীরে অবস্থিত কেদারনাথ মন্দির (Kedarnath Temple) হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র প্রধান তীর্থস্থানের মধ্যে অন্যতম। এই মন্দিরে স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের শিবলিঙ্গ অধিষ্ঠিত রয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময়েই লক্ষ্য লক্ষ্য পুণ্যার্থী এই তীর্থক্ষেত্রে যাত্রা করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন কী কারণে এই কেদারনাথ এত বিখ্যাত? কী কারণে বিগত কয়েকবছর ধরে এই স্থানে পুণ্যার্থীরা এত ভিড় জমায়? আসুন এই প্রতিবেদনে বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নিন।

হিন্দু শাস্ত্রানুযায়ী, সপ্তাহের প্রথম দিনটি (সোমবার) ভগবান শিবের আরাধনার দিন আর দ্বাদশ জ্যোতিলিঙ্গের অন্যতম এই কেদারনাথ চারটি পুণ্যতীর্থের সবচেয়ে প্রধান ধাম হিসাবে পরিচিত। পূর্বে কেদারখন্ড নামে পরিচিত ছিল এই তীর্থস্থান এবং এখানেই কেদারের নাথের পূজা শুরু হয়। পুণ্যার্থীদের ধারণা ভক্তরা ভোলানাথের কাছ থেকে একমনে  যা চেয়ে থাকেন তা তারা জীবনে পেয়ে থাকেন। তীর্থযাত্রীদের মনের এই বিশ্বাস ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে শুধু সনাতন ধর্মীরা নয়, এছাড়াও বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা মহাদেবকে দর্শন করতে ছুটে আসে এখানে।

বহুবার ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেদারনাথ মন্দির। ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডে যে ধস নেমেছিল তাতে কেদারনাথ শহরের সমস্ত ঘর-বাড়ি জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল। মারা গিয়েছিল লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ। ঘরবাড়ি, আত্মীয়-স্বজন হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েছিল বহুমানুষ। এক কথায় বলা যায়, এই তীর্থস্থান ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয়, খুবই অলৌকিকভাবে একটা বিশাল বড় পাথর এখানের নন্দী মূর্তির গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দেয়নি।

 

তীব্র বরফের কারণে সারা বছর খোলা থাকে না এই মন্দির। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এই মন্দির দর্শন বিগত কয়েকবছর ধরে দর্শনার্থীদের ভিড় জমায়েত হয়। এপ্রিলের শেষের দিকে অর্থ্যাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ দিনে খোলা হয় এই মন্দির। যেমন – ইতিমধ্যেই গতমাসের ২৫শে এপ্রিল সকাল ৬ টা বেজে ২০ মিনিটে খুলে দেওয়া হয়েছে মন্দিরের দরজা। প্রথম দিনেই শত শত দর্শনার্থীদের ভিড়ে ফুল মালা দিয়ে স্বয়ং মহাদেব সেজে উঠেছিলেন।

 

 

নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিনে অর্থাৎ কার্তিক পূর্ণিমায় মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এরপরেই ডোলায় চাপিয়ে বেশ কিছু মূর্তি দীর্ঘ ছয় মাসের জন্য রুদ্রপ্রয়োগের উখিমঠে পুজো করা হয়। এই যাত্রা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ডোলিযাত্রা নামে পরিচিত।

 

কেদারনাথের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ভয়াবহ ধ্বসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রায় দীর্ঘসময় কাল ধরে বন্ধ ছিল কেদারনাথ মন্দির। নতুনভাবে তীর্থস্থানটি তৈরি করার কাজে মগ্ন ছিলেন সরকার। এরপর পরিস্থিতি ঠিকঠাক অবস্থায় ফিরে এলে আবারও কয়েকবছর পূর্বে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। এছাড়াও শ্রাবণ মাসে রাখি পূর্ণিমার দিন এখানে অন্নকূটের মেলা বসে, যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভীড় জমান এখানে। ভক্তদের বিশ্বাস এই মেলায় এলে মনের বাসনা পূরণ হয়।

এছাড়াও কেদারনাথে ভগবান ভৈরবের মন্দির রয়েছে এবং সাথে আছে গৌরিকুন্ড। ভক্তদের বিশ্বাস এই গৌরীকুন্ডের গরম জলে স্নান করলে সব পাপ ধুয়ে যায় এছাড়াও কাছেই রয়েছে গুপ্তকাশী, বহু পুরোনো বিশ্বনাথের মন্দির, মণিকর্ণিক কুন্ড ও অর্ধনারীশ্বর মন্দির। এই সমস্ত কিছু নিয়েই গড়ে ওঠা বিখ্যাত উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ ভক্তদের কাছে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এছাড়াও কেদারনাথ পর্বত তীর্থযাত্রীদের অন্যতম আকর্ষণ, তাই  সাদা বরফ ও নীল আকাশের মেলবন্ধন দেখতেও বছর বছর পর্যটকরা ঘুরতে আসেন এখানে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − eight =