Calcutta time : একদিকে যেমন রয়েছে পবিত্রতা অন্যদিকে তেমনি শুভ্রতার প্রতিমূর্তি মা দুর্গা। এদিকে আবার মায়েরই মূর্তি তৈরিতে দরকার পরে ‘অশুচি, ‘অপবিত্র’ এলাকার মাটি। এই মাটি না হলে নাকি সম্পন্ন হয় না দুর্গার মূর্তি। কিন্তু কেন জানেন? পুজোর কয়েক মাস আগে থেকে কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা ওঠে তুঙ্গে ৷ ইতিমধ্যে মায়ের মূর্তি বানানো শুরুও হয়ে গিয়েছে। ধাপে ধাপে তৈরি করতে বেস্ত শিল্পীরা।
শাস্ত্রে বলা হয়, মায়ের এই আদল আনতে প্রয়োজন হয় গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিস, পবিত্র গঙ্গার জল আর নিষিদ্ধপল্লীর মাটির মিশ্রণ৷ আর সেই কারণেই সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় পতিতালয়ের মাটি৷
সমাজ যাদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনা জমে উঠেছে যাদের দেওয়াল বেয়ে, শুধু ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি। তাদের ঘরের মাটিই আবার দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ। বলা হয়, যে পুরুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বারাঙ্গনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়, তখন তিনি জীবনে সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য সেখানেই ফেলে আসেন। আর সংগ্রহ করেন ঘড়া ভর্তি পাপ।
উল্লেখ্য, যুগ যুগ ধরে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার বাস। পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তারা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ রাখতে চান। পবিত্র রাখতে চান। ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র। সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি৷ এই আচার থেকে বোঝানো হয় যে, নারী মায়ের জাতি। নারীর ঔরসেই পুরুষের জন্ম। নারীকে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয় অর্থাৎ যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সম্মান করতে হবে। নারী কোখনও অপবিত্র হতে পারে না। এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়াল ৷ শরৎকালে হয় দেবীর অকাল বোধন৷ এই সময় মহামায়া ৯টি রূপে পূজিত হন। এই নবম রূপটি আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি। বলা হয়, এই কারণেই এই রীতির জন্ম হয়েছে।