বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগী গেলে ফেরানো যাবে না। আইসিএমআরের নির্দেশিকা মেনে সব বেসরকারি হাসপাতালকেই কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করতে হবে। মঙ্গলবার সাতটি চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের পরে তাদের প্রস্তাব মেনে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে এমনই পরামর্শ দিতে চলেছে নবান্ন। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘সরকার কখনও বলেনি, বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা করতে পারবে না। যাতে বেসরকারি হাসপাতাল কোনও রোগী না ফেরায়, সে জন্য সরকার ফের নির্দেশিকা জারি করবে। শুধু কোভিড নয়, অন্য রোগীদের চিকিৎসাও যাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যথাযথ হয়, তা-ও বলা হবে।’’
মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ‘‘এখনও পর্যন্ত সারা দেশের করোনা আক্রান্তের ২.৫% এ রাজ্যে। অথচ সারা দেশের মোট করোনা শয্যার ৭.৫% এখানে। এম আর বাঙুরে ১১০০, রাজারহাট ক্যানসার হাসপাতালে ৪০০ শয্যা করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে। তার পরেও কোনও রোগী যদি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান, তা হলে নিষেধ করতে পারি না। সেই কারণেই নির্দেশিকা জারি করা হচ্ছে।’’
এ দিন মুখ্যসচিব আবার জানান, সামান্য উপসর্গ থাকা, উপসর্গহীন বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভোগা (করোনা সন্দেহভাজন) ব্যক্তিরা এখন চাইলে বাড়িতে থাকতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকারও এ নির্দেশ জারি করেছে। তবে কিছু শর্ত দিয়েছে কেন্দ্র। বাড়িতে আলাদা থাকার পর্যাপ্ত জায়গা, সর্বক্ষণের সেবা-সহায়ক রাখতে হবে তাঁদের। মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘কোনও একটি পাড়ায় এক জন করোনায় আক্রান্ত হলে সামাজিক বয়কটের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। পাড়ার লোক বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। পরিবারের সকলকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে বলছে। যদি উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গ থাকা লোকেদের বাড়িতেই রাখা যায়, তা হলে সামাজিক বয়কটের পরিস্থিতি তৈরি হবে না।’’
মুখ্যসচিব জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১০ জন। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখন অ্যাকটিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫২২। নতুন আক্রান্তরা মূলত কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হুগলির বাসিন্দা। হুগলিতে প্রতি দিনই নতুন নতুন আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান মুখ্যসচিব।
মুখ্যসচিব জানান, রাজ্যে চারটি জেলা রেড জোনের মধ্যে পড়ছে। ১১টি জেলা রয়েছে অরেঞ্জ জোনে। ৮টি জেলা গ্রিন জোনে। কালিম্পংয়ে ২৬ দিন আগে শেষ করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। জলপাইগুড়িতে শেষ করোনা সংক্রমণের খবর মিলেছে ৪ এপ্রিল। ফলে আগামী সপ্তাহে টানা ২৮ দিন করোনা সংক্রমণের খবর না মিললে এই দু’টি জেলা অরেঞ্জ থেকে গ্রিন জোনে চলে আসতে পারে। অন্য দিকে হুগলি অরেঞ্জ জোনে থাকলেও যে ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সে দিকে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মুখ্যসচিব।
নমুনা পরীক্ষা নিয়েও রাজ্য যে দ্রুত উন্নতি করছে, তা জানিয়ে মুখ্যসচিবের বক্তব্য, রাজ্যে প্রতিদিন ১৪০০ নমুনা পরীক্ষার প্রস্তুতি রয়েছে। ধীরে ধীরে সেই স্তরে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ‘‘স্রেফ ল্যাবরেটরি তৈরিই নয়, এ জন্য দক্ষ পরীক্ষকও প্রয়োজন। সবই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ মুখ্যসচিব জানান, গত কাল প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় এ রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ১২৬। মঙ্গলবার প্রতি ১০ লক্ষে তা বেড়ে হয়েছে ১৪২। দ্রুত জাতীয় গড়ে পৌঁছে যাবে রাজ্য। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে সাতটি চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিদের তরফে কিছু গঠনমূলক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যসচিব। সে সব প্রস্তাব সরকার কার্যকর করবে বলে জানান তিনি।