ভিনদেশী পশম সংগ্রাহকদের অপেক্ষায় আজও মেষপালকরা
ক্যালকাটা টাইম : ভেড়া বা মেশকে গৃহী পালন করার ইতিহাস 11000 থেকে 9000 খ্রিস্টপূর্ব আগের। ইরানী চিত্রলিপি থেকে জানা যায়্ 6000 খ্রিস্টপূর্বে প্রশ্নমালা ভেড়া পালন শুরু হয় মাংস দুধ এবং চামড়ার জন্য। এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো বর্তমানে “মটন” কথাটার মানে হলো ভেড়ার মাংস। আর আমরা যাকে মটন বলে চিনি সেটা আসলে ছাগলের মাংস অর্থাৎ মিট, অনেকটা ঠিক ফাউল এবং চিকেন এর মতন।
ব্যাবিলন সুমেরীয় এবং পারস্যের বেশিরভাগ অধিবাসী মেষপালকের জীবিকায় লিপ্ত ছিলেন সে আমলে! অস্ট্রেলিয়ান বরুলা,মেরিনো ,আওয়াসী, নেলোর নীলগিরি ডরসেটের মত নসু জাতের ভেড়া আছে পৃথিবীতে। তবে ভারতে অবশ্য মেরিনো এবং অন্যান্য উচ্চমানের লোভের আশাতে সংকরায়নের মাধ্যমে দেশী ভেড়ার তৈরির চেষ্টা চলছে।
প্রাচীন সিন্ধুসভ্যতায় পশুর লোম এর প্রচলন ছিল।ঋকবেদে এই প্রথমবার লোম দিয়ে বস্ত্র বয়ন এবং সেই বস্ত্র ধৌতকরণের উল্লেখ আছে। গারোলি সম্প্রদায়ের মানুষ ভেড়ার লোমের কম্বল বানাতেন।মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর বাংলাদেশের চাঁপাইনগঞ্জ এলাকায় চোখে পড়লেও এই কুটির শিল্প এখন প্রায় অবলুপ্ত পথে। তবে ভেড়ার পশম সম্ভাবনাময় সম্পদ জিডিপিতে যোগ হতে পারে এমনটাই জানা যায় সরকারি সূত্রে।
ভেড়া বেশি গরম সহ্য করতে পারে না তাই লোম কাটতে হয় তাদের স্বাস্থ্যের কারণে। বিশেষ ধরনের কাঁচির সহযোগিতায় একটি দেশি ভেড়া থেকে বছরে তিনবার মোট 300 গ্রাম পরিশুদ্ধ পশম আরোহন করা সম্ভব। তা পরিষ্কার জলে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে, চরকার মাধ্যমে পাঠিয়ে সুতো বানিয়ে বিশেষ ধরনের তাঁতে বোনা হতো, কম্বল মাফলার, পাপোশ, জায়নামাজ ও পূজার আসন। প্রবীণ মানুষেরা অনেকেই জানেন লালইমলি বা ধারিয়াল উলের কথা। যা সারাবছর শীতপ্রধান দেশ থেকে ভেড়ার লোম সংগ্রহ করে সেখানেই বাণিজ্যর পসরা সাজাতেন তারা। এখন অবশ্য, পেট্রোলের সাথে কেমিক্যালের মিশ্রণ ঘটিয়ে ক্যাশমিলন দিয়েই সমস্ত বস্ত্র তৈরীর প্রচলন শুরু হয়েছে। তবে সারা বিশ্বে 106 কোটিরও বেশি ভেড়ার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।12 থেকে 15 মাস বাদে এক থেকে তিনটি বাচ্চা দেওয়া এই ভেড়া প্রতিপালন অত্যন্ত সহজ। তাই অল্প হলেও আজও প্রতিপালন করতে দেখা যায় এই ভেড়ার দল। নদীয়ার বাদকুল্লার এরকমই এক মেষপালক জানালেন অতীতে শীতের আগে ভেড়ার লোম অর্থের বিনিময় সংগ্রহ করতে আসতেন কিছু ভিন রাজ্যের বাসিন্দা দীর্ঘ চার পাঁচ বছর ধরে তাদের আর দেখা নেই! তবে তিনি আশাবাদী, আবারো আসবেন তারা যদি সরকারি হস্তক্ষেপ মেলে এই কুটিরশিল্পে বাঁচানোর জন্য।
নিউস রিপোর্ট : সাংবাদিক মলয় দে, নদীয়া