শ্রেয়সী সাহা  :  ‘রাত হয়েছে। এবার ঘুম থেকে ওঠো।’ চোখ খুলতেই চোখের সামনে সটাং – এ দাঁড়িয়ে দাড়ি ভরতি এক লম্বা লোক। মুখটা দেখে চমকে ওঠে পাপ্পু। আবছা আলোয় সে দেখতে পায়, লোকটির দাঁত বের করা হাসি। চিনতেও পারে ইউটিউবার রোদ্দুর রায়কে।

“এবার উঠে পড়ো ভাই। সবাই ওঠো। রাতে কেউ ঘুমোয় নাকি? চলো তোমাদের গান শোনাই।” হেসে বলে ওঠেন লোকটি। রাত প্রায় বারোটা অথবা একটা তখন। পাপ্পুর বহু পরিচিত লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপে এসে এই অবস্থায় পড়তে হবে, জীবনে কখনও ভাবতে পারেননি সে। ইউটিউবার  রোদ্দুর রায়ের মধ্যরাতের ‘মোক্সা মজা’র চোটে রীতিমতো কাঁদোকাঁদো দক্ষিণ কলকাতার কসবা, তপসিয়া, আনন্দপুরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ওই তোলাবাজির অভিযুক্ত। এমনকী, বড়তলা থানার লকআপের বন্দিরাও তাঁর ভয়ে ছিল ভীত। রাত হতেই থানার লকআপে নিজস্ব ভঙ্গিমায় চিৎকার করে যখন তখন অশ্লীল গান গেয়ে উঠছেন আবার কখনও বা দুপুরেও।

এদিকে দক্ষিণ কলকাতায় পাটুলি থানায় রোদ্দুরের বিরুদ্ধে অন্য একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে ইতিমধ্যেই। আলিপুর থানায় তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে পাটুলি থানা। ওই থানায় তিনি কী কীর্তি করতে পারেন, তা নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন আধিকারিকরা। যদিও পুলিশের এক আধিকারিক জানান, পুলিশের সঙ্গে সে কোনও খারাপ ব্যবহার করেননি। দেননি কোনও গালিগালাজও। রোদ্দুর রায়ের ‘টার্গেট’ শুধু অন্য বন্দিরাই।

পুলিশ সূত্রের খবর, রোদ্দুর রায়কে যখন গোয়া থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়, ওই একই সময় গ্রেপ্তার হয় দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার ‘ত্রাস’ বলেই পরিচিত সোনা পাপ্পু। ধরা পড়ে তার আরও পাঁচ সঙ্গী। সন্ধ্যার পর লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে অভিযুক্তদের নিয়ে যাওয়া হয় সেন্ট্রাল লকআপে। জেরার সময় ছাড়া ওই ৬ জনের সঙ্গে বসতে বলা হয় রোদ্দুর রায়কে। প্রথম দিনে রোদ্দুরের চেহারা দেখে ও তার পুরনো কীর্তি জানতে পেরে হাসি মশকরা করেছিল পাপ্পু ও তার দলের লোকেরা। কাজটি যে কত বড় ভুলে ভরা, তা তারা টের পায় মধ্যরাতে।

এছাড়াও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একই ঘরে রাখা হয়েছিল রোদ্দুর ও পাপ্পুদের। প্রথম রাতটা নিজস্ব ভঙ্গিমায় বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল গানের উপর দিয়ে গেলেও পরের রাত থেকে ‘অত্যাচার’ আরও বাড়তে থাকে। গানতো ছিলই সঙ্গে সোনা পাপ্পুদের ‘মোক্সা’ বোঝাতে শুরু করে রোদ্দুর। তার সঙ্গে ‘মোক্সা’ নিয়ে আন্তর্জাতিক ‘বিপ্লব’ ও বিষয়টির উপর ‘গবেষণা’ নিয়ে রীতিমতো বক্তব্য পেশ করতে থাকে সে। প্রত্যেক রাতের গান আর বিরামহীন ‘বক্তৃতা’ শোনার পর ক্লান্ত পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা পুলিশ আধিকারিকদের অনুরোধ জানায়, তাদের অন্য ঘরে সরিয়ে নিতে। শেষে আদালতের নির্দেশে বড়তলা থানায় তাকে নিয়ে যাওয়ার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পাপ্পুরা। যদিও তারা একেবারে নিশ্চিত নয়। কারণ, ফের তাদের দেখা হতে পারে জেলে। সেখানে ফের রোদ্দুরের ‘পাল্লায়’ পড়লে তাদের অবস্থা কী হতে পারে, তা নিয়ে পাপ্পুরা এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছে। এমনটিই জানিয়েছে পুলিশ আধিকারিকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here